রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি:
ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। আর কাউন্সিলের এক বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দল টানা তিনবার ক্ষমতায়, ফলে সাংগঠনিক বিরোধ তৈরি হয়েছে একটু বেশি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এই বিরোধ রয়েছে। আওয়ামী লীগের মতো বড় একটি দলে বিরোধ থাকাই স্বাভাবিক।
এই দলে ভালো পদ পেতে যুগের পর যুগ অপেক্ষা করছেন এমন অনেক যোগ্য ও সিনিয়র নেতা আছেন। আসলে এই দলে এতো এতো বাঘা লোক কাকে রেখে কাকে দেবেন। এরমধ্যেই এসেছে নতুন নতুন জেনারেশন। গুরুদের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন শীর্ষরা।
কভিডের এক বছরের মাথায় নবীন প্রবীন মাঠে আছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকরা তৎপর। পদোন্নতি না হোক , বর্তমান জায়গাটি তো ঠিক থাক।
ধারণা করা হচ্ছে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের ( ওবায়দুল কাদের) যেহেতু দুইবার হয়ে গেছে এবার নতুন কেউ আসবে। ঐতিহ্যগত এবং ক্ষমতার দিক থেকে নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তাই এই দল যারা করেন তার সাধারন সম্পাদক হওয়ার স্বাদ লেগেই থাকে মনে। এটা গৌরবের একটা পদ।
আর যারা সাধারন সম্পাদক হওয়ার প্রতিযোগিতায় মাঠে তাদের এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। নানাভাবে দলের সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ এবং অন্যান্য যেই সূচকগুলি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে সেগুলোর পেছনে ছুটছেন তারা।
এদিকে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার পর চার বারের নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য গতবারের তুলনায় কিছুটা চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল যতটা না ভোগাবে , বেশি ভোগাচ্ছে নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশিদের খেলাধুলা।
আর বাংলাদেশের ভোটারদের একটা চিরায়ত অভ্যাস রয়েছে একবার এটা তো আরেকবার ওটা। ফলে এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব অনেক বেশি ডায়নামিক হতে হবে। সেক্ষেত্রে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই থাকছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দলকে তিনি যেভাবে আগলে রেখেছেন এবং সরকারে আসার পরও অনেক উন্নয়ন করেছেন। সরকারে ও দলে শেখ হাসিনা তার মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছেন।
যদিও কিছু চাপা পক্ষ আছে খুবই নীরবে তারা এর ব্যত্যয় ঘটাতে চান। কিন্তু সেটি এই সম্মেলনে দলের নেতাকর্মীরাই হতে দেবে না- অনেক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই এর আভাস পেয়েছি।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আলোচনা সভাপতিকে বাদ দিয়েই। এরপরের আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানে প্রতিযোগিতামূলক সেটি হলো সাধারণ সম্পাদকের পদ। সবকিছু মিলিয়ে সামনে নির্বাচন, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি, ভূ রাজনৈতিক তত্ত্ব- তাই সভাপতির এবার দক্ষ,যোগ্য ও দলের প্রতি এবং সভাপতির প্রতি লয়ালএকজন সাধারণ সম্পাদক দরকার।
নানা কারনে দলের অনেক এমপি নেতা বিতরৃকিত অবস্থায় আছেন। ফলে এবার সবাই এটাও মনে করেন একজন ক্লিন ইমেজের সাধারণ সম্পাদকই বেশী প্রাধান্য পাবে।
একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যিনি নিজেও আগে সাধারণ সম্পাদক হতে চেয়েছিলেন, কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম, “কে হতে পারেন। এই সময়ের সাধারণ সম্পাদক।”
জিভ কেটে বললেন, ” এটা নাম ঘোষনার আগ পর্যন্ত অনিশ্চিত। ”
এটা আসলে সভানেত্রী ঠিক করবেন- তিনি যোগ করলেন।
বললাম ,” এই যে এতো এতো নাম। প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে? ”
এই প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রকাশ হওয়াযর তালিকার অন্তত চার জনের সাথে কথা হলো। সবার কথা, আলোচনায় নাম আছে। এখন নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ চাঁদের মতো। এই চাঁদ কে হাতে পাবে? কেউ কেউ বলেন সোনার হরিণ।
সাবেট প্রসিডেন্ট প্রয়াত জিল্লুর রহমানের পর বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন খেয়াল করলে দেখা যায়, সম্মেলনের আগে প্রার্থীদের তদবির , লবিং চলেই আসছে। সঙ্গে আরো নানামুখী চাপ।
অনেকেই সাধারণ সম্পাদকের স্বপ্ন দেখতে দেখতে প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে উপদেষ্টা চলে গেছেন।
এবার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে মাঠে আছেন অন্তত জনা দশেক। তাদের কর্মকাণ্ড পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে এবং চলতে থাকবে। ততদিন এদের নামের পাশে সাধারন সম্পাদকের তকমা প্রায় ঝুলতে থাকবে।
আর নেত্রী যদি মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব পরিবর্তনে চাপা দু:খ বেদনা তৈরি হবে। নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তাহলে তো চাঁদ থাকবে ওবায়দুল কাদেরের হাতে।
আবার আলোচিত নামের মধ্য থেকে একে অপরের বিরোধীতা করছেন। ত্রুটি খুঁজে দিতে কেউ কেউ সংবাদ প্রকাশের কাগজপত্র যোগান দিচ্ছেন। এটা আসলে নতুন কিছু নয়।
বঙ্গবন্ধুর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিল্লুর রহমানই ছিলেন চারবার। ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি যারা করছেন তারা কিছুটা কম চাপে। সরকার প্রধানের দক্ষতা ও টানা ক্ষমতায় থাকা পদধারীরা ১৯৭৫ সালের পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যে চাপে এবং মামলা হামলা , নির্যাতনে ছিলেন সেটি গত কয়েক বছরে নেই।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২১ টি জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে আওয়ামী লীগে। আর এ পর্যন্ত কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১০ জন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান রহমান চারবার করে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তাজউদ্দীন আহমদ হয়েছেন তিনবার। আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দা সাজেদা, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুইবার করে হয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরের দুইবারের মেয়াদ চলছ। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ভয়েস/আআ